ফরিদপুরের সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে ‘মোনাফেক’ আখ্যা দিয়ে নির্বাচনের পরদিন জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর কথা বলেছেন ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় সালথার বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া বাজারের পাশে একটি বাড়িতে নির্বাচনী সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শাহদাব আকবর বলেন, ‘আজকে আমরা দেখি, এখানে অনেক মীর জাফর। আমার বলতেও কষ্ট হয়, আপনাদের এই উপজেলার সভাপতি দেলোয়ার সাহেব, যিনি দীর্ঘ সময় এই আওয়ামী লীগের কথা বলেছেন; দীর্ঘ সময় তিনি আওয়ামী লীগ করে এই শেষ সময়ে এসে তিনিও মোনাফেকি করলেন। তিনি কিন্তু ’৮৬ সালে যখন জাতীয় পার্টির ভোট কাটছিলেন, তখন কিন্তু আমি সালথা থেকে দৌড়ায় এসে তাঁকে দাবড়ায়ে ধানখেতে উঠায়ছিলাম। আর সেই লোকটারে আমার মা (সাজেদা চৌধুরী) দুধকলা দিয়ে পুষেছিলেন। তিনি আজকে জায়গামতো চলে গেলেন।’
শাহদাব আকবর চৌধুরী বলেন, ‘আজকে তিনি অনেক কথা এদিক-ওদিক অনেক রকম কথা বলেন। ইনশা আল্লাহ একটা জুতার মালা বানাইতে দিছি। ৮ তারিখ ওনার গলায় জুতার মালা দিয়া ঘোরানো হবে। বেইমানদের আপনারা চিনে রাখেন।’
সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ সরকারের, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক নিয়ে আমি এসেছি, সেখানে এদিক-ওদিক অনেক বড় বড় নেতারা ডান-বাম করেন, যারা সারা জীবন দেখা গেছে নৌকার কথা বলেছে, এরা মোনাফেক। এরা মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীর আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে, শেখ হাসিনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এই মোনাফেকদের বিচার ইনশা আল্লাহ এই নগরকান্দা-সালথার মাটিতে হবে।’
শাহদাব আকবর আরও বলেন, ‘এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা কিন্তু প্রকৃত মানুষগুলোকে খুঁজে পাব, যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, যারা এক টাকার টিআর-কাবিখার জন্য দৌড়ায় না। যারা সারা জীবন নিজের জমিজায়গা বিক্রি করে এই আওয়ামী লীগ করেছে। তাদের আমি বিশ্বাস করি, টাকাপয়সা দিয়ে কেনা যাবে না। আর যদি তাদের টাকাপয়সা দিয়ে কিনতে পারত, তাহলে এই বাংলাদেশে যারা চোরাকারবারি করে, তারাই সারা বাংলাদেশে সব সংসদ সদস্য হয়ে যেত। তারা কিন্তু সেটা পারে নাই। কারণ, জনগণ কোনো দিন সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না।’
সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তাঁর সবেচেয়ে যারা ঘনিষ্ঠ লোকজন, সহচর, তারা কিন্তু তাঁর রক্তের ওপর দিয়ে গিয়ে খুনি মোশতাকের দলে, মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল। বেইমানি করেছিল। সাজেদা চৌধুরীর রক্তে কোনো বেইমানি নাই। তার সন্তান আমি, আমার শরীরেও কোনো বেইমানি নাই। তখন সাজেদা চৌধুরী এই দলকে সংগঠিত করেছিল। ২১ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই আপনারা তৃণমূলের যাঁরা নেতা-কর্মীরা আছেন, জনগণ আছেন, আপনারা ছিলেন বলেই আমরা ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিলাম। ২০০৭ সালে আবার দেখেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর অনেক বড় বড় নেতা চলে গেল। প্রধানমন্ত্রীকে মাইনাস করবে বলে। কিন্তু কামিয়াব হয় নাই। জনগণ বিপুল ভোটে তাঁকে জয়ী করেছেন।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন প্রার্থীর মুখে এমন অশালীন ভাষা কাঙ্ক্ষিত নয়। এমন বক্তব্য দিয়ে এবং জনসম্মুখে সভা করে তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। উনি (শাহদাব) হয়তো ভেবে বসে আছেন, উনি নির্বাচনে জিতে গেছেন, এ জন্য এমন আপত্তিকর কথা বলে বেড়াচ্ছেন।’
দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘আমি শাহদাবের এই বক্তব্যের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ওয়ান–ইলেভেনের সময় যে ব্যক্তিকে ১৪ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যে ব্যক্তি নগরকান্দা-সালথা থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, সেই ব্যক্তির স্থান আগামী নির্বাচনে জনগণই ঠিক করে দেবেন।’
নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহদাব আকবর ছাড়াও নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। অন্য দুই প্রার্থী হলেন খেলাফত আন্দোলনের জয়নাল আবেদীন ওরফে বকুল মিয়া এবং জাকের পার্টির ফজলুর হক।