দেশের সংবাদপত্রশিল্পের বিরাজমান সংকট উত্তরণে গণমাধ্যমের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে এবং সাংবাদিকতা পেশার মান সুসংহত করার লক্ষ্য নিয়ে গঠন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরাম’।
নবগঠিত এ ফোরাম বলছে, তাদের উদ্দেশ্য ও নীতি হচ্ছে—মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গণমাধ্যমের ভূমিকা সুসংহত করা। তাছাড়া গণমাধ্যমের স্বার্থ সংরক্ষণ, গণতন্ত্র সুরক্ষার জন্য সাংবাদিকতা, তথা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে ও দেশের উন্নয়নের পক্ষে কাজ করবে ফোরাম।
ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলো থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং দেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে যেসব দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে, সেসব পত্রিকার সম্পাদকদের প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সভায় ফোরামের আহ্বায়ক ও উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। সভায় ঢাকার ২৫টি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক এবং আট বিভাগীয় শহরের প্রতিষ্ঠিত পত্রিকার সম্পাদকরা ভার্চুয়ালি অংশ নেন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঢাকায় জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। সভায় ২২ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি এবং একই সঙ্গে সাত সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদ
এ ফোরামের উপদেষ্টা পরিষদে আছেন ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আমাদের কুমিল্লার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাজাহান সরদার, বাংলাদেশের খবরের সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, ভোরের ডাকের সম্পাদক কে এম বেলায়েত হোসেন ও বাংলাদেশ পোস্টের সম্পাদক শরিফ সাহাবুদ্দিন।
আহ্বায়ক কমিটি
ফোরামের আহ্বায়ক করা হয়েছে দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতনকে। যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন আলোকিত বাংলাদেশের সম্পাদক মাহমুদ আনোয়ার ও আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাসিমা খান মন্টি। ফোরামের সদস্য সচিব হয়েছেন দৈনিক আজকালের খবরের সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার।
এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন দৈনিক জনতার সম্পাদক আহসান উল্লাহ, ডেইলি ইন্ডাস্ট্রির সম্পাদক ড. এনায়েত করিম, দৈনিক খোলা কাগজের সম্পাদক মো. আহসান হাবীব, মানবকণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দুলাল আহমেদ চৌধুরী, শেয়ারবিজের সম্পাদক মীর মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশের আলোর সম্পাদক মফিজুর রহমান খান বাবু, সংবাদ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রিমন মাহফুজ, প্রতিদিনের সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এসএম মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ বুলেটিনের সম্পাদক মোহাম্মদ আশরাফ আলী, ডেইলি সিটিজেন টাইমসের সম্পাদক নাজমুল আলম তৌফিক।
ফোরামের সদস্য হয়েছেন বরিশালের আজকের বার্তার সম্পাদক কাজী নাছির উদ্দিন বাবুল, ময়মনসিংহের স্বদেশ সংবাদের সম্পাদক জগদীশ চন্দ্র সরকার, চট্টগ্রামের বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ ওমর ফারুক, রাজশাহীর দৈনিক সোনার দেশের সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, সিলেটের দৈনিক সিলেট মিররের সম্পাদক আহমেদ নূর, খুলনার দৈনিক রাজপথের দাবির সম্পাদক মকবুল হোসেন মিন্টু, রংপুরের প্রথম খবরের সম্পাদক আব্দুল বারী তোতা ও বগুড়ার দৈনিক চাঁদনী বাজারের সম্পাদক সুমনা রায়।
সভায় দেশের সংবাদপত্রশিল্পে বিরাজমান বহুমুখী সংকট ও উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচকরা মতামত প্রকাশ করেন যে, করোনার বিরাজমান পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ সারাদেশের অসংখ্য পত্রিকা নানামুখী প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে টিকে আছে। সংবাদপত্রগুলোর প্রচারসংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পেয়েছে এবং বিজ্ঞাপন হ্রাস পাওয়ায় আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংবাদপত্রশিল্পের এ সংকট মোকাবিলায় পত্রিকাগুলোর সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য সংগঠন প্রয়োজন। সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল ও ডিএফপির ক্রোড়পত্রের বিল পরিশোধের জন্য সাংগঠনিকভাবে তথ্য মন্ত্রণালয় বা ডিএফপিতে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার জন্য নেতৃত্বের প্রয়োজন।
পত্রিকাগুলোর বিরাজমান সমস্যা ও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বাস্তব অবস্থা নিয়ে ঢাকার বেশ কয়েকজন সম্পাদকের উপস্থিতিতে গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে দীর্ঘ আলোচনা হয়। নিয়মিত প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংবাদপত্রগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণে সোচ্চার হওয়া দরকার। তার জন্য প্রয়োজন সংগঠনের। সভায় নিয়মিত প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের সমন্বয়ে একটি নিবন্ধনকৃত সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে সবাই একমত পোষণ করেন। তারই আলোকে সভায় ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভাগীয় ও জেলা শহরের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরাম’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।