বন্ধ পাটকলগুলো পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে কোনো একটিকে নির্দিষ্ট করে নয়, সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), সরকার টু সরকার (জিটুজি), ইজারাসহ অন্যান্য পদ্ধতিতে বিনিয়োগের সুযোগ রেখে প্রতিবেদন দিতে যাচ্ছে এ সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী কমিটি।
চলতি সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। এরপর কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মিলগুলো চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং বিজেএমসি’র (বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন) কর্মকর্তারা। অন্যদিকে বিজেএমসির জনবল কাঠামো পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে যৌক্তিকীকরণের বিষয়ে সুপারিশ দিতে আরেকটি কমিটিও তাদের প্রতিবেদন প্রায় চূড়ান্ত করেছে।
গত ১ জুলাই থেকে সরকার বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে পাটকলগুলোতে কর্মরত ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) ও ছুটি নগদায়নসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার মাধ্যমে চাকরি অবসায়নেরও ঘোষণা দেয়া হয়।
একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাটপণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও পুনর্বিন্যাস করে নতুন মডেলে বিজেএমসির বন্ধ মিলগুলো জরুরিভিত্তিতে ফের চালু করা হবে।
এই প্রেক্ষাপটেই পাটকল পুনরায় চালুসহ অন্যান্য সম্পত্তি যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে নীতিনির্ধারণী কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির প্রধান হচ্ছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী কমিটির সদস্য সচিব এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুল কালাম বলেন, ‘আশা করছি রিপোর্টটি আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত করা যাবে। মিলগুলোতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বতঃসিদ্ধ যে পদ্ধতিগুলো আছে সবগুলোই বিবেচনা করছে কমিটি। স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদ বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব মিলগুলো চালু করা।’
বিজেএমসির জনবলের বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রতিবেদনটিও আমরা প্রায় চূড়ান্ত করেছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজেএমসির জন্য যে লোকবল দরকার সেটুকু রেখে বাকিটা আত্তীকরণের জন্য বলা হবে। কোথায় কোথায় আত্তীকরণ করা যায়, সেই সম্ভাবনাগুলোও তারা দেখবে।’
নীতিনির্ধারণী কমিটির সদস্য ও বিজেএমসির চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ বলেন, ‘পাটকল পুনরায় চালুসহ অন্যান্য সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গঠিত নীতিনির্ধারণী কমিটি কাজ করছে। রিপোর্টটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি, এটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী মন্ত্রণালয় নীতিমালা করবে বা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। সেটাই বিজেএমসি বাস্তবায়ন করবে।’
তিনি বলেন, ‘স্টেকহোল্ডারদের মতামতের জন্য আমরা মিলগুলো পরিদর্শনের একটা ব্যবস্থা করেছি। মিলগুলো লাভজনকভাবে কীভাবে চালানো যায় সে বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে তারা যাতে বাস্তবভিত্তিক মতামত দিতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই আমরা এটা করেছিলাম। অনেকে পরিদর্শন করেছেন, মতামত দিয়েছেন।’
চেয়ারম্যান বলেন, ‘মিলগুলো চালুর বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার। এখানে সরকারের বিনিয়োগ ভূমি ও অবকাঠামো। কেউ যদি এর মধ্যেই করতে চায়, যন্ত্রপাতি এনে করবে। বিনিয়োগের অন্যান্য পদ্ধতিও আছে।’
‘তবে কোন পদ্ধতিতে মিলগুলো চালু করব, সেটা রিপোর্ট চূড়ান্ত হলেই বলা যাবে। রিপোর্টেই লক্ষ্যটা ঠিক করে দেয়া হবে। এখন পিপিপিও বলা হচ্ছে, জিটুজিও বলা হচ্ছে। লিজের কথাও বলা হচ্ছে।’
কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘মিলগুলো চালুর জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কমিটি কোনো একটি বিষয় স্থির করে সুপারিশ করবে না, এক্ষেত্রে নমনীয়তা থাকবে। ইজারার সুযোগও রাখা হবে, একই সঙ্গে পিপিপি ও সরকার টু সরকার— সব অপশনই রাখা হবে। যেখানে যেটা সুইট্যাবল, সেটাই অ্যাপ্লাই করা হবে।’
গত ৫ আগস্ট নীতিনির্ধারণী কমিটির দ্বিতীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, বন্ধ ঘোষিত পাটকলগুলো আগ্রহী উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারীরা সরেজমিন পরিদর্শন করতে পারবেন। আগামী ২০ আগস্ট পর্যন্ত তারা মিলগুলো পরিদর্শন করে এর যন্ত্রপাতি, স্থাপনাসহ অন্যান্য সম্পত্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন।
এ বিষয়ে বিজেএমসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘মিল পরিদর্শনের জন্য ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেয়া হলেও আমরা সেটার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকিনি। অনেকেই মিল পরিদর্শন করেছেন। এখনও কেউ মিল পরিদর্শন করতে চাইলে আমরা সেই সুযোগ দিচ্ছি।’
গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ডেমরায় করিম জুটমিলে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ৩০ জনের হাতে চেক ও সঞ্চয়পত্র তুলে দিয়ে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানও উপস্থিত ছিলেন।
বিজেএমসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম উদ্বোধনের পর পর্যায়ক্রমে এটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চারটি মিলের পাওনা অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি আছে। তারা একটা-দুটা মিল দেখে টাকা দিচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।’